লেখক: ফাদার রবার্ট গোনসালভেছ, প্রেরিত শিষ্য সাধু যোহেনের ধর্মপল্লী, খাগড়াছড়ি। 
ফাঃ রবার্ট গোনসালভেছ

সম্প্রতি বহুল আলোচিত সংক্রমন ব্যাধি করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী প্রলয়ঙ্কর গতিতে ধেয়ে এসেছে চীনের উহান থেকে। ইতালী, স্পেন এবং আমেরিকার মত দেশগুলিতে করোনা ভাইরাস সনাক্ত ও বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রাণের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বিদেশ থেকে বহুলোক স্বদেশ ফিরে এসে বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে। এভাবে নিত্যদিনের আলোচনা, পর্যালোচনা ও নিরীক্ষণের শীর্ষে রয়েছে কভিড-১৯ করোনা ভাইরাস। দেখা যাচ্ছে গত মার্চ ও এপ্রিল মাস হতে রেডিও, টেলিভিশন, খবরের কাগজ ও প্রচারপত্রসহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে দিবারাত্র প্রচার করা হচ্ছে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। এখন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য সমাবেশ ও জনসমাগম নিষিদ্ধ, গণপরিবহন ও যত্রতত্র হাটবাজার বন্ধ করার বিধি-নিষেধ প্রজ্ঞাপন আকারে জারী করা হয়েছে। যারা শ্রমিক, মজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক, শিল্প কলকারখানার শ্রমিক, শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষক মণ্ডলী, হোটেল, রেস্তোরা ও পর্যটন কেন্দ্র নির্ভর শ্রমিক, চিকিৎসা কাজে জড়িত পেশাজীবি, ব্যবসায়ীদের জন্যে পর্যায় ভেদে ত্রাণসামগ্রী, প্রণোদনা, ঋণ মওকুফ, বাড়ী ভাড়া না নেওয়া এবং স্বল্পমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ কাজ, ইত্যাদির মাধ্যমে সরকার নানামুখী সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। যাতে কেউ খাদ্য সংকটে না পড়ে এবং বাড়িতে থেকে সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা পায়।

করোনা ভাইরাস সংক্রমনের প্রবল ভীতির মধ্যে বিদেশ ফেরৎ ব্যক্তিদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন,

একটি পাড়ার অধিবাসীরা নিজেরাই নিজেদের লকডাউনে রেখেছে।

আইসোলেশন, লকডাউনসহ নানাবিধ প্রক্রিয়ায় নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমন ঠেকাতে বারবার বলা হচ্ছে “ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন”। বর্তমানে সারা বিশ্বের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে করোনা নামক মরণ ভাইরাস, তাই জীবন রক্ষাকারী মেডিকেল সরঞ্জাম, সার্জিকেল মাস্ক পরিধান করে সুরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান IEDCR, ঔষধ নিয়ন্ত্রন সংস্থা, আইসিডিডিআরবি, সেনা প্যাথালোজিক্যাল ল্যাবরেটরী বিএসএমএমইউ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক (সিডিসি) সেন্টার যার ডিজিস কন্ট্রোল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে অবিরত, অনবরত ও বিরতীহীনভাবে যোগাযোগ, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

পাহাড়ী নারীরা কিছু বিক্রয়ের প্রচেষ্টায় রাস্তার ধারে।

বর্তমান সংকটকালে যখন সারা বিশ্ব কাঁপছে করোনা আতঙ্কে, এসময়ে সবাইকে বলা হচ্ছে বাড়িতে থাকুন এবং দূরত্ব বজায় রাখুন। বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিবেন, জ্বর, সর্দি, কাশি হলে গোপন না রেখে চিকিৎসা সেবা নিতে বার বার বলা হচ্ছে। নভেল করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ, ২০২০। সে সময় হতে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুরকে হটস্পট হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। এরপর থেকেই তথ্য প্রযুক্তির ও গণমাধ্যমের সহায়তায় প্রতিটি জেলায় সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে তৃতীয় সহস্রাব্দে ভয়াবহ প্রাণঘাতী আতঙ্ক, সর্বস্থানে সর্বসাধারণকে ভীষণভাবে বিপদগ্রস্থ, অসহায়, নিরুপায় করে তুলেছে। আমরা খাগড়াছড়িতে ২৩ মার্চ হতে সম্পূর্ণভাবে পাড়ায় পাড়ায় পালকীয় কাজ থেকে বিরত রয়েছি। এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই রাস্তায় ও পাহাড়ী বসতির সংযোগ সীমানায় বাঁশের বেরিকেড, প্রচারপত্র, ব্যানার, স্প্রে ব্যবহার করে স্বাভাবিক চলাচলের উপর কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। এখানে মার্মা, চাকমা ও ত্রিপুরা উপজাতীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নিজেরাই সচেতন হয়ে মরণব্যাধী করোনা ভাইরাস হতে রক্ষা পেতে গণহারে মাস্ক ও সুরক্ষা পোশাক পরিধান, স্প্রে, লকডাউনের আওতায় এনে সতর্কতা, সাবধানতা ও তদারকির নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছে।

এবার খাগড়াছড়িতে আমরা প্রায়শ্চিত্তকাল পুণ্যসপ্তাহ এবং শুভপুনরুত্থান পর্বের উপাসনাসমূহ বিশ্বাসী

ওএমএস’র চাল কিনতে জড়ো হওয়া মানুষ।

ভক্তবিহীন অবস্থায় ক্ষুদ্র পরিসরে পালিত হয়েছে। সাংগ্রাই, বিজু ও বৈশু একান্তই ঘরোয়া পরিবেশে পালিত হয়েছে এবং বর্তমানে মাহে রমজান এ সংকট কালে নীরবতার মধ্যেই পালিত হচ্ছে। দুঃসময়ে ও দূর্দিনে ঝুঁকিপূর্ণ সংক্রমন হতে সুরক্ষা ও ঘরে থাকার কারনে পেট চালাতে দরিদ্র কবলিত কর্মহীন পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর কাছে সীমিতভাবে বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান লোকালয়ে খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে।

আমাদের খাগড়াছড়িতে দূরাবর্তী পাহাড়ী এলাকায় ১৪টি খ্রীষ্টিয় ক্ষুদ্র সমাজ বিভিন্ন পাড়ায় বৌদ্ধ ও সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীদের সাথে করোনা যুদ্ধের মরন ছোবলের আতঙ্কে গৃহে অন্তরীন অবরুদ্ধ জীবন যাপন করছে। ইতোমধ্যে কারিতাসের মাধ্যমে বিপদকালীন সাহায্য ধর্মপল্লীর মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পাহাড়ী এলাকার ক্ষুদ্ধ, বিরক্ত, অস্থির ও হতাশ জনগণের একমাত্র প্রার্থনা করোনা মুক্তি। পরমস্রষ্টা ঈশ্বরকে ডাকা ছাড়া বিকল্প পথ বলতে বোধ হয় কিছু নেই। ঈশ্বর আমাদের সবার সহায় হোন।

ওএমএস’র চাল কিনতে মানুষের দীর্ঘ লাইন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here