জামালখাঁন ক্যাথলিক গির্জা’র গাছ কাটা ও উদ্ভুত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের আর্চবিশপের বিবৃতি

0
2158

চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিস বাংলাদেশের আটটি ক্যাথলিক ডাইয়োসিসের মধ্যে অন্যতম। চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিসে জামালখাঁন ক্যাথলিক ধর্মপল্লীর ন্যায় আরো ১০টি ধর্মপল্লী ও ২টি উপ-ধর্মপল্লী বিদ্যমান। চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিসের অন্তর্গত সকল ধর্মপল্লীর অর্থ সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ  ও ক্রয়-বিক্রয় বিশপের একক সিদ্ধান্তে নয় বরং এই ব্যাপারে খ্রিস্ট মণ্ডলীর আইন (Canon Law) ধারা ৪৯৩, উপধারা ১ অনুযায়ী গঠিত একটি ‘অর্থ পরিষদ’ সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ভাটিকান সিটিতে পুণ্য পিতা পোপ মহোদয়ের কাছে জবাবদিহিতা করে। অর্থ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামালখাঁন ধর্মপল্লীর কবরস্থানে বিদ্যমান ৭টি সেগুন গাছ আর্চডাইয়োসিসের নিজস্ব প্রয়োজনে কাটার ব্যাপারে Canon Law ধারা ৪৯৩, উপধারা ৩ অনুযায়ী আর্চডাইয়োসিসের অর্থ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সময়কালটি ছিল জামালখাঁন ধর্মপল্লীর জন্য বিশেষ ক্রান্তিকাল। দায়িত্বরত অবলেট যাজক সম্প্রদায় তখন মাত্র জামালখাঁন থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছেন। অপরদিকে এসভিডি যাজক সম্প্রদায় মাত্র দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। ধর্মপল্লীর পালকীয় পরিষদের সভা সাধারণত ধর্মপল্লী’র পাল-পুরোহিত আহ্বান করেন। কিন্তু পুরাতন যাজকদের বিদায় ও নতুন যাজকদের দায়িত্ব গ্রহণের সময়কালীন অবস্থায় পালকীয় পরিষদের কয়েকজন সদস্যের সাথে আলোচনা হলেও আনুষ্ঠানিক কোন সভা আহ্বান করা সম্ভবপর হয়নি। গাছ কাটার সিদ্ধান্ত বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য না পাওয়ায় এবং পালকীয় পরিষদে কোন আলোচনা না হওয়ায় জামালখাঁনের প্রিয় খ্রিস্ট বিশ্বাসীগণ যথেষ্ট ব্যথিত হয়েছে। প্রক্রিয়াগত কিছু ত্রুটি’র কারণে আমার নিজ জনগণ খ্রিস্ট বিশ্বাসীদের দুঃখ আমি উপলব্ধি করছি এবং আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

যেহেতু গাছগুলো কবরস্থানে, সেগুলো কাটার সময়ে বেশ কিছু কবরের মার্বেল পাথর ও বাধাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিষয়টি ইচ্ছাপ্রসূত নয়। তথাপি নিজ মৃত আত্মীয়ের কবর যে কোন ব্যক্তির কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও প্রিয় একটি স্থান। মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়দের কষ্ট ও ব্যথায় আমি সমব্যথী। অনিচ্ছাকৃতভাবে কবর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় যারা ব্যথিত ও দুঃখিত, তাদের প্রতি আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। ক্ষতিগ্রস্থ কবরগুলো অনতিবিলম্বে চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিসের নিজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার করে দেয়া হবে।

১২/০২/১৮ তারিখে দৈনিক আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আমার বক্তব্য হিসেবে জামালখাঁন ধর্মপল্লী’র কতিপয় ব্যক্তিকে মিডল ম্যান, নেশাগ্রস্থ, মাইকে কেড়ে নেয়া উচ্ছৃঙ্খল দল হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জামালখাঁনে সংঘটিত ঘটনা’র প্রেক্ষিতে পরিবেশিত তথ্যে কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা কাম্য ছিলনা। সকল খ্রিস্টভক্তের জন্য আমি মেষপালক, তারা সকলে আমার সন্তান।

ক্যাথলিক ক্লাবে এলকোহল খাওয়া হয়, গ্যাম্বলিং চলে বা উচ্চ শব্দে গান বাজনা করা হয়, এমন অভিযোগ আমি উক্ত প্রতিবেদনে করিনি। বরং নতুন ভবনে ক্লাবের কার্যক্রম স্থানান্তরিত হলে দেশের প্রচলিত আইনানুসারে এই বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে মর্মে একজন অভিভাবক হিসেবে তাদেরকে অবগত করেছি। ক্যাথলিক ক্লাবকে ডেভেলপার কোম্পানী কর্তৃক নির্মাণাধীন ভবনে ফ্লোর দেয়ার ব্যাপারে যে চুক্তিনামা দলিল আছে, তা বাতিল করা হয়েছে মর্মে কখনোই আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়নি। বরং চুক্তিনামা দলিলের কিছু শর্তাবলী পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধনের ব্যাপারে আলোচনা ক্যাথলিক ক্লাবের সঙ্গে ইতোপূর্বে হয়েছে এবং এখনো চলমান আছে।

উপরোক্ত বিভ্রান্তি সমূহ যদি আমার প্রিয় খ্রিস্টভক্ত সন্তানদের হৃদয়ে আঘাত করে থাকে, তাদের কাছে আমি আধ্যাত্মিক পিতা হিসেবে যীশু খ্রিস্টের দেয়া শক্তিতে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

গাছ কাটা সংক্রান্ত বিষয়ে আরো আলোচনা’র প্রয়োজনে চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিসের মনোভাব উন্মুক্ত। ভিকার জেনারেল শ্রদ্ধেয় ফাদার গর্ডন ডায়েস এবং আইন বিভাগের প্রধান শ্রদ্ধেয় ফাদার লেনার্ড সি. রিবেরু উপরোক্ত বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত। প্রয়োজনে তাদের সাথে জামালখাঁন ধর্মপল্লীর খ্রিস্টভক্তগণ আলোচনায় মিলিত হতে পারেন

আমি প্রত্যাশা করি, জামালখাঁন ধর্মপল্লীর খ্রিস্টভক্তগণ খ্রিস্ট মণ্ডলীর বৃহত্তর স্বার্থে বিষয় সমূহ উপলব্ধি করতে পারবে এবং পারস্পারিক ভুল বোঝাবুঝি ও তিক্ততা’র অবসান ঘটবে। পবিত্রাত্মা আমাদের সকলের হৃদয়কে পরিচালনা করুন। অমলোদ্ভবা মা-মারীয়া: আমাদের মঙ্গল প্রার্থনা কর।

+ মজেস এম. কস্তা, সিএসসি

চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটান আর্চবিশপ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here